আচ্ছা,জেরুজালেমে যে যুদ্ধটা হচ্ছে,তা ইহুদি বনাম মুসলিম যুদ্ধ,নাকি ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েল? প্রশ্নটা অনেককেই করেছি,সাথে সাথেই উত্তরটা দিতে পারেনি অনেকেই। কেন পারেনি? তা লিখলেই একটি প্রবন্ধ হয়ে যাবে।
ভিপি নুরু শিয়াদের মুসলমান মনে করে নাকি কাফের? তা সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর ফোন নম্বর যাদের কাছে আছে, তারা কেউ ফোন করে আমাকে একটু নিশ্চিত করলে, খুশি হতাম। কেন তা বললাম,তার ফেসবুক পোষ্ট পড়লেই বুঝতে পারবেন। এক মাস আগেও আমার এলাকার এক লোক ইসলামের ইতিহাস নিয়ে আলোচনার সময়, কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলছিল, ফরিদ তোমার বক্তব্য দেখি “শিয়াদের মত” হয়ে গেল। শিয়ারা তো “কাফের!” শিয়াদের কাফের বলা সেই লোকটি গতকাল আমায় বললেন,”হামাস তো ইসরাইলকে রকেট মাইরা তছনস কইরা দিছে। এইডা ইসলামের বিজয়!”আমি তার কথায় হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারন,হামাস শিয়া,আর শিয়ারা তারই ভাষায় “কাফের!”
ফিলিস্তিনিদের নিয়ে নোয়াম চমেস্কির বয়ান পড়ে খুশি হওয়ার কিছু নাই। মার্কেট ধরে রাখার ধান্দা। নোয়াম চমেস্কি বিশাল মানবদরদি। অথচ বেলুচ মুসলিমদের নিয়ে একটি হরফও ডিলেভারি দেয়নি আজ পর্যন্ত। দেবেও না, কারন, পাঠক হারাবে। সাথে হয়তো পয়সাও। পত্রিকা ও সাংবাদিকেরা পাঠক ও চাকরি হারানোর ডরে কি করে, আর কি করে না। তা তো আজকাল কারও অজানা থাকার কথা নয়।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল ইরান ইরাকের এক দশক ব্যাপী যুদ্ধে কার পক্ষে ছিল? নিশ্চিত করেই বলা যায়, তিনি ইরাকের পক্ষে ছিলেন। কারন ইরানিরা শিয়া। আাসিফ নজরুলের মত পন্ডিতের তো অজানা নয় যে,হামাস একটি শিয়া গ্রুপ। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ইরাক ইরান যুদ্ধে একজনকেও আমি ইরানের সাপোর্টার হতে দেখিনি। ধর্মীয় পরিচয়ে দিতে যে লোকটিকে নিজে ও তার সন্তানদের ধর্ম পরিচয়ে ইসলাম লিখে,পাশে “সুন্নি” শব্দটি ব্রাকেটে বন্দী রাখে। (এখনও অনেক মুসলমান ধর্ম পরিচয়ে ইসলাম লিখে, পাশেই লেখে সুন্নি।) মানে সে শিয়া নয়।
তার ধারনা শিয়ারা “মুসলিম নয়”। সেই লোকটিও দেখি আজ হামাসের পক্ষে কথা বলে। অথচ হামাস শিয়া সম্প্রদায়ের। পত্রিকায় দেখলাম তুরস্কের নেতা এরদোগান শিয়া সুন্নি বিভেদ ভুলে যেতে বলেছেন। অথচ তার পাকিস্তানি ভক্তরাই কিছুদিন আগেও তো পাকিস্তানে লাখ লাখ সুন্নি একত্রিত হয়ে সড়কে মিছিল করে বলল,”শিয়া কাফের,শিয়া কাফের!”ইউটিউবে সার্চ দিন সেই ভিডিওটা পেয়ে যাবেন। পাকিস্তানে কাদিয়ানিদের মত শিয়াদের কেবল রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষনা করা বাকি।
হামাস কোথা থেকে হামলা করছে? মিশর সীমান্তবর্তী অঞ্চল গাজা থেকে। এই গাজা কিন্তু আল আকসা থেকে দুরে। অথচ ওয়েষ্ট ব্যাংক কাছে, একেবারে আল আকসার কাছে। সেখানে রয়েছে আরব সমর্থিত ফিলিস্তিনি। তারা, তো হামাসের সাথে নেই। তারা সংখ্যায়ও হামাস থেকে বেশি। ফিলিস্তিনের মানচিত্র সামনে রেখে ভাবুন অনেক বিষয় পরিস্কার হয়ে যাবে। এছাড়া ১৯৪৭ ও ১৯৪৮ এর ভারত ও প্যালেস্টাইনের ইতিহাস পড়ে দেখতে হবে। বৃটিশরা ৪৭ পাকিস্তান ও ৪৮ ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরি করেছিল। কেন করেছিল তা আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। এ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্পষ্ট দুটি ভাগ শিয়া ও সুন্নি। তারা নিজেরাই কখনও এক হতে পারবে না।
ঢাকার শাহবাগ আর বায়তুল মোকররমের হুজুরগন আর বামেরা সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে তারা উভয়ে বিষয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যমত পোষন করলেও ফিলিস্তিনিরা হামাসের বিষয়ে এখনও ঐক্যমতে পৌঁছেনি। এমনকি আরবরা চাইবে না,হামাস বিজয়ী হোক। হামাস বিজয়ী হওয়া মানে,ইরানের বিজয়। আরবরা তা কখনওই তা চাইবে না। মজার বিষয় হলো,বাংলাদেশের যারা ইসরাইলে হামাসের রকেট হামলায় খুশি তারাও অধিকাংশ কিন্তু শিয়াদের কাফের মনে করে থাকে!
হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলে একজন ভারতীয় নার্স নিহত হয়েছে। নার্সটি ভারতের কেরালা রাজ্যের অধিবাসী।বিস্ময়কর বিষয় হলো কেরালার বামপন্থী রাজ্য সরকারের কেউ নার্সটির শব দেহ গ্রহন করতে যায়নি। নার্সটি তো আর ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করতে যায়নি। তবুও কেন,বামপন্থী কেরল রাজ্য সরকারের এই উদাসীনতা? নাকি বামপন্থীরা মুসলিম ভোট হারানোর ভয়ে ভীত ছিলেন! তবে আমরা কি ধরে নেব কেবল বিজেপি নয়,ভারতীয় বামেরাও সাম্প্রদায়িক রাজনীতে ডুবে আছে? কমিউনিস্টদের এত অধপতন! বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর সেই নার্সের নিহতের খবর ছেপেছে। নিউজফিডে শব দেহ নিয়ে যে সকল জঘন্য ও বিশ্রী কমেন্টস্ করা হয়েছে তা তো আমরা মুখেই আনতে পারবো না।
এই যে যুদ্ধ হচ্ছে যদি বলি আসুন,রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে দিই তাহলে যুদ্ধ থাকবে না। তখন কিন্তু আমাকে কমিউনিস্ট বলা হবে। যদিও আমি কমিউনিস্টই। বলবে,রাষ্ট্র ছাড়া পৃথিবী চলবে কি ভাবে? ঠিক যেমন,ভুমিহীনদের যদি বলি আসুন জমির মালিকানা বিলুপ্তির আন্দোলন করি তখন,ভূমির মালিকের আগে ভূমিহীন দৌড়ে পালাবে। বলবে,ভূমির মালিক না থাকলে কাজ করবো কোথায়! বেতন দেবে কে? খাবো কি? অথচ,রাষ্ট্র একসময় ছিল না। ছিল না ভূমির মালিকানাও। জমির মালিকানা থাকবে আর কোন্দল থাকবে না। রাষ্ট্র থাকবে যুদ্ধ থাকবে না। তা অসম্ভব। রাষ্ট্র থাকলে যুদ্ধও থাকবে।
আবারও এমন দিন আসবে যখন,রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে,থাকবে না ভুমির মালিকানাও। কোন্দল ও যুদ্ধ তখন এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে।

এই ক্যাটাগরির আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন…..