কেবল এটা মনে কইরেন না যে, মৌলোভিরা কেবল পাকিস্তান প্রেমে মুক্তিযুদ্ধ, ভারত ও আওয়ামী লীগ বিরোধীতা করে। অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কি কোন ন্যারেটিভ পয়দা করা সম্ভব? সম্ভব নয়। পাকিস্তান পন্থীদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিন। তাদের জন্য আসা বিদেশি অর্থের উৎস বন্ধ করলে। তারা তখন এমনিতেই দূর্বল হয়ে যাবে। ৯০ দশকে পাকিস্তান পন্থী মৌলবাদী শক্তি এত সবল ছিলো না। যা আজকে দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশ মৌলবাদের এত আস্ফালন অর্থ শক্তিকে ঘিরে।।বিদেশী প্রভুদের ছত্রছায়া তো আছেই।
সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে আমেরিকার বিলিয়ন বিলিয়ন নয়, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচা করে। তাদের গোয়ন্দা সংস্থা সিআইএকে ব্যাবহার করেছে। এ কথা তারা অফিসিয়ালি স্বীকার করেছে। যার কারনে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি ৫৭টি মুসলিম প্রধান দেশেের একটিতেও দাড়াতে পরেনি। অন্যান্য দেশেও একই কারনে শক্তিশালি হয়ে দাড়াতে পারে না। পারবেও না। তার প্রমান হলো,সোভিয়েত ইউনিয়নের পয়সা নেই তাই, সোভিয়েত ফেরত বামেরা সুরা ইয়াসিন পরে পানি পান করে। বলে, কোরানের আয়াত পড়া পানি পান করলে রোগ ভালো হয়।।অথচ, সেই ব্যাক্তিটিই আগে মৌলোভি, ইসলাম, কোরান নিয়ে হাসাহাসি করতো। আমি নিজের চোখে তা দেখেছি। আজ যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের মত রাশিয়া ফান্ডিং করেই চলতো। তবে দেখতেন, আজো ভারত ও বাংলাদেশের বামেরা শক্তিশালী থাকতো আদর্শ ফাদর্শ অনেকটা ভুয়া কথা। ফান্ডিং না থাকলে পৃষ্ঠ পোষকতা না থাকলে। আপনার আদর্শ টিকিয়ে রাখা মুশকিল। তার প্রমান আমাদের সামনেই আছে। ৩০ লাখ মানুষ হত্যাকারীর দল জামায়াত আজ অলিখিত ভাবে ক্ষমতায়। তাদের সকল নেতা কর্মি হয় চাকরিজীবী, না হয় ব্যবসায়ী। ধরুন ইসলামি ব্যাংক গুলো থেকে তাদের নেতা কর্মি বিদায় করা হলো। প্রশ্ন ফাঁসের হোতা কোচিং সেন্টার নামের জামাতি সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হলো। আপনি তারপর আর জামায়ত শিবিরের নেতা কর্মি খুঁজে পাবেন না। আর মাদরাসার মৌলোভিরা তো বেহেস্ত লোভ দেখিয়ে আপনারটা খায়। এবং আপনার সন্তানকেও বলতকার করে। পরগাছা মৌলভিরা এভাবেও টিকে থাকে। পাকিস্তান প্রেমিকদের অক্সিজেন দিচ্ছেন আপনারাই মাদরাসা বানিয়ে। মাদরাসায় অবশ্য সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও তাদের মিত্ররাষ্ট্রগুলোও বিনিয়োগ করে থাকে তা এখন অপেন সিক্রেট।
যেমন ধরুন পাকিস্তানের দখলকৃত বেলুচিস্তান এত বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করলেও। তারা সফল হতে পারেনি। কারন, তাদের কোন সাম্রাজ্যেবাদী দেশ পৃষ্ঠপোষকতা করতেছে না। ৭৫ বছর ধরে বেলুচদের এত জান মাল সম্ভ্রম ক্ষয় করেও তারা স্বাধীন হতে পারলো না এখনো। অথচ, ইন্দোনেশিয়া ভেঙ্গে পূর্ব তিমুর হয়ে গেলো বিনা রক্তপাতে! কারন, পূর্ব তিমুরের দিকে পরাশক্তি ও ধনী রাষ্ট্রগুলোর দোয়ার বরকত ছিলো। পৃষ্ঠপোষকতা কেমন? তার জলন্ত উদাহারন খোদ বাংলাদেশ। ৪০% সমর্থন থাকার পরও ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা । এমন কি দলটি প্রায় নিষিদ্ধও! অন্য দিকে ৩৫% সমর্থন থাকার পরও বিএনপির প্রধান নেতা তারেক রহমান দেশেই ঢুকতে সাহস পাচ্ছেন না! অথচ, অনেকেই মনে করতেছে তিনি আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে জামায়াত এবং তার সহোযোগীরা সর্ব সাকূল্যে ৩% হয়েও ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতা ভোগ ও উপ ভোগ করতেছে! এমন কি যারা মন্ত্রীর পিএস এপিএস হলেই নিজেদের সফল মনে করতেন। তারাও আজ মন্ত্রী। কারন কি? কারন ঐ যে বিদেশী প্রভুদের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থের প্রোলোভন।
এমন কি যে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘামাসের এত নাম ডাক শুনেন ঐ অর্থের কারনেই। ওখানেও চলে ব্যাবসা। পৃথিবীর সব চেয়ে ধনী সন্ত্রাসী সংগঠন এই গা-জার হামাস। আপনারা যদি মনে করেন হামাস কেবল ধর্ম ও দেশ প্রেমে মত্ত। তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কেবল তারা নয়, গাজার মুসলমানদের নামে বহু দেশ ও সংগঠন ব্যবসা করে আসছে। এখানেও আবার মার্কস প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে। সব কিছু অর্থ-পয়সা কেন্দ্রিক। অর্থ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা যে দিকে মানুষ ও আদর্শ সেদিকে। ভারতের, দেওবন্দের তাবলীগ নামের যে প্রতিষ্ঠানটা দেখছেন। তা স্বপ্নে পাওয়া, এবং মওলনা ইলিয়াস যখন তাবীলীগে লোক খুঁজে না পেতেন। মুজুরি দিয়ে লোকজন মসজিদে বসিয়ে রাখতেন। আজ তাবলীগে ৫০ লক্ষ লোক জমায়েত হয় ঢাকা টঙ্গি ময়দানে। ইসরায়েল কি ভাবে টিকে আছে এতগুলো মুসলিম রাষ্ট্রের পেটের ভিতর। কারন তাদের প্রচুর টাকা আছে। সেই সাথে কয়কটি পরাশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা।
বৃটিশদের পৃষ্ঠপোষকা না থাকলে। পাকিস্তান ও ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র পয়দাই হতো না। সম্ভবই ছিলো না। এমন কি পরাশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্বই থাকতো না এখন। পাকিস্তান গড়ার ২৫ বছরের মাথায় ভেঙ্গে বাংলাদেশ হয়ে গেছে। আবারো ভেঙ্গে বেলুচিস্তান ও সিন্ধ নামের আরো দুটি দেশ হওয়ার কথা ছিলো। পাকিস্তান বলতে শুধু থাকার কথা ছিলো আজ আধা পাঞ্জাব।
জিন্নাও রাজনীতি ছেড়ে চলে গিয়ে ছিলেন ইংল্যান্ডে। লিয়াকত আলী খান তাকে ভারতবর্ষে ফিরিয়ে এনেছিলো। কার কথায়? কার পরামর্শে? ইতিহাসবিদেরা এ সব বিষয়ে কথা বলেন না৷ কি ভাবে নামাজ পরতে হয় তা জানে না। সেই রকম একজন তাও আবার মদ্যপ ও শুয়োর খাওয়া মোহাম্মদ আলী জিন্না কি করে ইসলামী পাকিস্তানের বাবা এ কওম হয়ে উঠলো? জিন্না জীবনে এক সেকেন্ড জেল খাটেনি৷ তিনি জাতীয় নেতা পাকিস্তানের! অর্থ ও কোন রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তা আদৌ সম্ভব! যেমন আজকের বাংলাদেশে ডক্টর ইউনুস বাংলাদেশের তৌহিদি জনতার দেশ প্রধান! কোন ইউনুস? যিনি নামাজ পরতে পারেন না।
পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কূর্দিরা বিলিন হয়ে গেছে। আবার আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আফগানিরা সোভিয়েতদের কাবুল ছাড়া করেছে। ফের, রুশ চীনের সহযোগিতায় আমেরিকাকেও কাবুল থেকে তাড়িয়েছে সেই আফগানীরাই। অর্থ সহযোগীতা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোন দর্শন ও রাষ্ট্র গড়েও না, ভাঙ্গেও না। ১৯৭১ এর মহান মু্ক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত এমন কি ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে। আমরা এত সহজে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। আমরা হয়তো ভুলে গেছি। বা, ভুলে থাকতে চাই। বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ ইসরায়েল৷ অপ্রিয় হলেও সত্য যাদের ডরে আমরা ইসরায়েলের এ স্বীকৃতি গ্রহন করিনি।।সেই মুসলিম দেশগুলোর একটিও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাশে ছিলো না। বরং বিরোধীতা করেছিলো। এমন কি যে ফিলিস্তিনীদের কিছু হলে বাংলাদেশের মুসলমান কেঁদে বুক ভাসায়। সেই ফিলিস্তিনীরা কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ৩০ লাখ বাঙালি হত্যার সময়। নিজেদের চোখ,মুখ ও কান বন্ধ করে রেখে ছিলো।
যাই-ই বলি না কেন কোন সন্দেহ নেই আদর্শ গুরুত্বপূর্ণ। তবে যা,বলছিলাম, আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে অর্থ ও পৃষ্ঠ পোষকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা আপনি আমি আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না৷ সম্ভবত এ জন্য খাঁটি বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। মুখের কথায় চিড়ে ভিজে না। আরো একটি প্রবাদ খুঁজে পাই, তা হলো খুঁটির জোড়ে পাঠা কুদে।
আজকে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তাদের পেছনে রয়েছে অর্থের জোগান এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও কূটনৈতিক শক্তি। এদের সরিয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চায়,চাচ্ছে।।তাদেরও একই পথ ধরে আসতে হবে। এটাই সত্য।

