May 28, 2025 10:27 pm

Writer, Politician, Freethinker, Activist

May 28, 2025

Writer, Politician, Freethinker, Activist

বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ সংস্কার আন্দোলন ও প্রথম বিধবাবিবাহ!

Spread the love

বিদ্যাসাগরেরবিধবাবিবাহ..

পৃথিবীর অনেক সমাজে অনেক নিয়ম প্রথা নীতি নৈতিকতা বিদ্যমান। ব্রাজিলে সী বীচে নগ্ন ঘুরে বেড়ানো না নৈতিকতা বিরোধী, না সামাজিক বা ফৌজদারি অপরাধ৷ আবার ইরানে কোন নারীর বোরকা ব্যাতিত ঘর হতে বের হওয়াই অনৈতিক ও বড় অপরাধ।

বিধবা বিবাহ ভারতীয় সমাজে বহু শতাব্দীর অপরাধ ও অনৈতিকতা বলে বিবেচিত হয়ে আসছিলো। ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাসের মাধ্যমে সেই অপরাধ বোধ ও অনৈতিকতা বোধ ভাঙ্গতে শুরু করে।

বিধবাবিবাহ

আইন পাশ হলেই যে, ভারতীরা বিধবা বিবাহে হুমরি খেয়ে পরেছে তা কিন্তু নয়৷ কোন নিয়ম ও প্রথা একদিনেই পরিবর্তন করা যায় না৷ আইনটি পাস হওয়ার প্রায় সাড়ে চার মাস পর, বিধবাবিবাহ সমর্থকদের নানান রকম প্রচেষ্টায় একটি আইন সম্মত বিধবাবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েটি কিন্তু এত সহজেই হয়ে যায়নি।

বিধবাবিবাহের প্রথম বিয়ের পাত্র ছিলেন, সংস্কৃত কলেজের কৃতী ছাত্র ও শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। তিনি প্রথমে একজন বিধবাকে কোলকাতায় আনেন, তবে সামাজিক ও পারিবারিক চাপে এক সময় বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু কন্যার অভিভাবকেরা মামলার করার হুমকি দিলে, তিনি বিয়ে করেন।

তারপরও,অবশ্য দু বার বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করেন। কারন শ্রী শচন্দ্রের মা, দুবারই ভয় দেখান, তিনি ছুরি নিয়ে বসে আছেন, যদি তার পুত্র বিধবাবিবাহ করে তবে তিনি আত্মহত্যা করবেন।

শ্রীশচন্দ্রই প্রথম ভারতীয় হিন্দু যিনি আইনত প্রথম বিধবাবিবাহ করেন। এই বিয়েতে বর ও কন্যা পক্ষ মিলে প্রায় দুহাজার অতিথি উপস্থিত ছিলো। কোলকাতার প্রায় সকল প্রধান ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলো ঐতিহাসিক এই বিধবাবিহের সময়। এছাড়া এ বিধবাবিবাহকে সমর্থন জানাতে শতাধিক ধর্মপন্ডিত ও সে সময়ের বিশিষ্ট ঘটক উপস্থিত ছিলো।এমন কি দর্শনার্থীদের এত ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হয়েছিলো।

শ্রীশচন্দ্রই
..শ্রীশচন্দ্রই..

তবে বিধবাবিবাহ বিরোধীরাও বসে থাকেনি। তারাও ব্যাপক বিধবাবিবাহ বিরোধী প্রচার চালায়। এই ঐতিহাসিক বিধবাবিবাহকে, রক্ষণশীলেরা “জাত মারার ষড়যন্ত্র ” বলে আখ্যায়িত করে। এ বিয়েতে উপস্থিত থাকা ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ বন্ধ করে দেয়া হয় হিন্দু সমাজে। শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন সহ ২য় বিধবাবিবাহকারী মধুসুদন ঘোষ সামাজিক ভাবে অত্যাচারিত হন। আত্মীয়রাও তাদের বয়কট করেছিলো।

এমন কি বিদ্যাসাগর তারপরের দুমাসে পাঁচ, ছয়টি বিধবাবিবাহ দিতে ব্যার্থ হন, বিধবাবিবাহ বিরোধীদের প্রবল সামাজিক চাপের কারনে। বিদ্যাসাগরের খ্যাতি,তার বন্ধুদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা থাকার পরও পাঁচ ছয়টি বিধবাবিবাহের আয়োজন বাতিল হয়ে যায়।

১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারী মাসে তৃতীয় ও চতুর্থ বিধবাবিবাহের বরদ্বয় ছিলেন ; রাজনায়ণ বসুর জ্যেঠতুতো ভাই, দূর্গানারয়ণ বসু ও মদনমোহন বসু। তাদেরও আত্মীয়স্বজন ও সমাজ বয়কট করে। রাজনায়ণ বসু গ্রামের লোকজনের ভয়ে দীর্ঘকাল দিনের বেলায় বাড়ি যেতে পারেনি। বিদ্যাসাগর তার পুত্রকে বিধবার সাথে করানোর কারনে তার রক্ষণশীল আত্মীয়রা বয়কটের হুমকি দেয়৷ এমন কি নিজের স্ত্রীর সাথেও বিদ্যাসগরের মনোমালিন্য ঘটে পুত্রকে বিধবাবিবাহ করানোর কারনে।

বহু চাঁদা ও পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার পরও বিধবাবিবাহ আন্দোলনে গিয়ে বিদ্যাসাগর ঋৃণগ্রস্ত হয়ে পরেন। বিদ্যাসাগর বেঁচে থাকুক বলা লোকজন যেমন ছিলো,তেমনি বিধবাবিবাহ প্রচলন করার জন্য, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হলে, মুর্খটা তবে কে?’ এমন কথা বলার লোকও কম ছিলো না।

আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন…..

 

 


Spread the love
Tags :

Grid News

Latest Post

Find Us on Youtube