মানুষ অর্থ চায়। মানুষ ক্ষমতাও চায়। কেন এসব চায়? দরিদ্রের জন্য,দারিদ্রর দুষ্টচক্রের ফাঁদ ভয়াবহ। মানুষের জীবন অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে শেষ হয়ে যায়। তাই দরিদ্রদের সময় নেই ক্ষমতার বিষয়ে চিন্তা করার। তবে,যে সকল দরিদ্র ধূর্ত হয়, চালাক হয়,বদমাইশ হয় তারা ক্ষমতাবানদের কাছাকাছি থাকতে চায়, থাকে। ঠিক বনে জঙ্গলে যেমন বাঘ ও সিংহকে অনুসরন করে ফেউ। এখন আমি অর্থ নিয়ে আলোচনা করছি না। ক্ষমতার বিষয়ে কথা বলবো। যারা অর্থে বিত্তে ডুবে আছেন। আজকাল তারাও ক্ষমতা চান। বাংলাদেশের ঢাকা থেকে শুরু করে আমেরিকার নিউইয়র্কের ধনীরাও চায় ক্ষমতা৷ শুরুতেই প্রশ্ন রেখেছি কেন ক্ষমতা চায়। ধনী তো দুর, ধনকুবেরাও বুঝে গেছে। কেবল অর্থ থাকলেও চলবে না,আরো কিছু চাই, তা হলো ক্ষমতাও চাই৷ যাতে কেউ সামনে না দাড়াতে পারে। তা হোক আমেরিকার এলেন মাস্ক অথবা বাংলাদেশের দরবেশ বাবা খ্যাত সালমান এফ রহমান।
তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ক্ষমতা চাওয়ার ভিন্ন কারনও রয়েছে৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত ধনী হওয়া যায়। আর ধনী ক্ষমতা পেলে হয়ে উঠে ধনকুবের। ক্ষমতার সাথে ধন- অর্থ -সম্পদের সম্পর্ক আছে। আবার ধন,অর্থ -সম্পদ মানুষকে ক্ষমতার লোভে আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতা পেতে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠে। খুন,ধর্ষনের মত ভয়াবহ অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ক্ষমতা পেতে মানুষ মিথ্যা ও প্রতারনার আশ্রয়ও নেয়। এখানেই থেমে থাকে না। ক্ষমতা পেতে নিজের পরিবারের এমন কি খোদ নিজের জীবনও হুমকির মুখে ফেলে৷ তবুও ক্ষমতা চাই। ক্ষমতাও নেশা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেশা৷ যদিও কার্ল মার্কস কেবল ধর্মকে আফিমের সাথে তুলনা করেছেন। দূর অতীতে তো আছেই নিকট অতীতেও পৃথিবী দেখেছে। ক্ষমতার জন্য ভাই, ভাইকে, পিতা পুত্রকে। পুত্র, পিতাকে হত্যা করেছে। তুর্ক ও আরবদের খলিফাদের ইতিহাসের দিকে তাকালে তা বারবার দেখা যায়। ভারতবর্ষে মুঘলদের ইতিহাসেও তা স্পষ্ট। হাল আমলে, সৌদি আরব,ওমানেও তা খুঁজে পাই।
উল্টো ঘটনাও আছে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। আবার কেউ প্রেমের টানে সিংহাসনও ছেড়েছে। এসব খুব খুব কম এবং ব্যতিক্রম ঘটনা। আজকের পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে রাজতন্ত্র নেই। গনতন্ত্রের নামে ক্ষমতাকে জনগণের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আদিম কাল পেরিয়ে আসার পর,মানুষ একম সময় দাস -প্রভু ছিলো। তারপর প্রজা, রাজা-বাদশা হলো। তারপর মানুষ আবার নাগরিক হলো।।এই নাগরিকরা ক্ষমতাবান হয়ে উঠতে চায় রাজা বাদশার মত। প্রশ্ন ঐ একটাই মানুষ কেন ক্ষমতাবান হতে চায়?
কেবল মানুষ ব্যাক্তিগতভাবে নয়, সম্প্রদায়, ধর্ম,বর্ন ও জাতির নামে একে অপের উপর ক্ষমতা চায়? প্রকৃত পক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগ করার ইচ্ছা৷ প্রশ্ন একটাই ক্ষমতা কেন চায় মানুষেরা ? এ প্রশ্নের উত্তর দার্শিক,রাজনীতিক অর্থনীতিবীদ, এবং অপারাধ বিশেষজ্ঞরা একেকজন একেক উত্তর দেয়,দিচ্ছেও, দেবেন, তা জানি। কিন্তু আমরা আমজনতা তো দর্শন,অর্থবিজ্ঞান, রাজনীতি,অপরাধ বিজ্ঞান বুঝি না। মানুষ কেন ক্ষমতা চায়? তা আমরা আমজনতা এই প্রশ্নের সোজা উত্তর কিভাবে পাবো? কার কাছ থেকে পাবো? ধর্মবেত্তারা তো সব উত্তর তাদের, যার যার শাস্ত্র মতে ব্যাখ্যা করে। সে ব্যাখ্যাগুলো আবার অন্যে শাস্ত্র বিরোধী। এমন কি, নিজ নিজ শাস্ত্রমতেও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। আমি কিন্তু বলিনি ধর্মবেত্ত্বারা উত্তর দেয়। বলেছি, তারা ব্যাখা করে। বড় জোড় রেডিমেট উত্তর সামনে আনে। কারন, দর্শন সহ সকল বিদ্যায় প্রশ্ন করা যায়।। কেবল, ধর্মে প্রশ্ন চলে না৷ সে মতে ধর্ম বিদ্যা কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। আমি মনে করি প্রশ্ন ছাড়া বিদ্যা হয় না। ধর্মে প্রশ্ন তোলা অপরাধ,কোন কোন প্রশ্ন করা তো মহা অপরাধ। প্রশ্নে আপনার জান, জবান, জীবিকার যে কোন একটা হরন করা হতে পারে। এমনকি তিনটাই ঘটতে পারে আপনার জীবনে। সে দিকে যাচ্ছি না।
প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেলো। মানুষ কেন ক্ষমতা চায়? আবার একজন, ব্যবসায়ী,একজন শিক্ষক, একজন ডাক্তার,একজন ধর্মবেত্ত্বা,একজন বেকার,একজন ধনী ও ধনকুবেরের ক্ষমতার আকাংখা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন হয়। এমন কি একজন শহুরে এবং গ্রামীন মানুষের ক্ষমতার স্পৃহার কারনও কিন্তু ভিন্ন প্রকার। ক্ষমতার স্পৃহার কারনের এই ভিন্নতা নয়া প্রশ্নের জন্ম দেয় প্রশ্নের ভিতরেই! এ আরেক রহস্য। অর্থাৎ আপনি যখন প্রশ্ন করবেন মানুষ কেন ক্ষমতা চায়। এবং এ প্রশ্নের যত গভীরে যাবেন। তত গোলক ধাঁধায়,পরবেন। উত্তর খুঁজে পাবেন না। আসলেই কি তাই? আরো এক প্রশ্নের উদ্ভব হলো। তাই না! আমার সোজা কথা,মানুষ মানুষকে দাবিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতা চায়।