May 28, 2025 8:07 pm

Writer, Politician, Freethinker, Activist

May 28, 2025

Writer, Politician, Freethinker, Activist

“মোঘল এ আযম” সিনেমার আড়ালে সিনেমা (১পর্ব)

Spread the love

মোঘল আযম শুধু একটি সিনেমা নয়—এটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। চলচ্চিত্র যে কেবল তার বিশাল প্রযোজনা ব্যয় শিল্পগুণের জন্য বিখ্যাত তা নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক মহাকাব্যিক প্রেম কাহিনী, ইতিহাস, এবং পরিচালকের দূরদর্শিতা।

যে কোন বিচারে ভারতের সিনেমার ইতিহাসে “মোঘলে এ আযম” অতুলনীয়,অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দেশ চীন ও পাকিস্তানের দুই কর্নধারই এসেছিলেন ‘মোঘল এ আযম’ সিনেমার সুটিং দেখতে! ১৬ বছর সুটিং শেষে কোন সিনেমা রিলিজ হওয়া একটি বিরল ঘটনা। নায়ক নায়িকা তথা আনারকলি – সেলিম চরিত্রে অভিনয় করা দীলিপ কুমার ও মধুবালা দুজনেই সত্যি সত্যিই প্রেমেও পরে ছিলেন। সুটিং এর সময় মুখ্য অভিনেত্রী মধুবালার বাবা সুটিং স্পটে উপস্থিত থাকতেন আদালাতের হুকুমনামা হাতে নিয়ে। মধুবালার বাবা মামলা করে ছিলেন, সুটিং ব্যাতিত দীলিপ কুমার মধুবালার সাথে কথা বলতে পারবে না!

কেন না,মধুবালার বাবা কোন অবস্থাতেই দীলিপ কুমারের সাথে মেয়ের সম্পর্ক হোক তা চাইতেন না। এমন কি পরিচালক কে আসিফ,মধুবালাদীলিপ কুমারের রোমান্টিক দৃশ্যের সময় হওয়ার আগেই একজন জুয়ারী বন্ধুকে তৈরী রাখতেন রামী খেলায় মুধুবালার বাবাকে ব্যাস্ত রাখতে। উল্লেখ্য মধুবালার বাবার রামী খেলার নেশা ছিলো।।এবং তার সেই বন্ধুটি স্বেচ্ছায় হেরে যেতো মধুবালার বাবার সাথে জুয়া খেলার সময়। যদিও সেই বন্ধুটির জুয়ায় হারের পয়সাও পরিশোধ করতেন পরিচালক কে আসিফ।

আবার মোঘল এ আযমের পরিচালক,কে আসিফ (করিমুদ্দীন আসিফ) সুটিং এর ১৬ বছরে তিন বিয়েও করে ফেলেন! রীতা দেবি আসিফের প্রথম স্ত্রী। ২য় স্ত্রী দীলিপ কুমারের বোন। ৩য় স্ত্রী নিগার সুলতানা। অন্য দিকে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান সিনেমায় গান গাইতেন না। কিন্তু পরিচালকের আবদার উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী কে দিয়েই গান গাওয়াবেন। বড়ে গোলাম আলী খান তা টের পেয়ে অস্বাভাবিক পারিশ্রমিক দাবী করেন। যখন লতা মুঙ্গেশ্কর ও মো রফি ৪ শ ৫ টাকায়,গান গাইতেন। তখন, উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক চেয়ে বসেন!

সবাইকে অবাক করে দিয়ে কে আসিফ দশ হাজার টাকা অগ্রীম দিয়ে দেন। এবং দুটি গান রেকর্ড করান ৫০ হাজার টাকা দিয়ে! এবং বলেন, আপনার সঙ্গীত অমূল্য ৫০ হাজার টাকা কিছু না! এভাবেই বিভিন্ন কারনে ১৫২০ লাখ টাকার সিনেমার বাজেট ১ কোটি টাকার উপর চলে যায়। যার কারনে মোঘল এ আজম সিনেমার প্রোযোজক, একবার পরিচালক কে আসিফকে বাদ দিতে চান! কিন্তু প্রযোজক তার পরিচালক কে আসিফের সততার প্রতি আস্থাবান ছিলেন। কেন না, কে আসিফ ইতিহাসের সেরা বাজেটের সিনেমা করতে গিয়েও থাকতেন কম দামী বাড়িতে, চলতেন ভাড়া করা ট্যাক্সিতে। সিগারেট খেতেন বন্ধুদের থেকে চেয়ে চেয়ে৷তিনি চাইলে অনায়াসে প্রযোজকের টাকা নয় ছয় করতে পারতেন। পারিশ্রমিক বেশি দাবি করতে পারতেন।

কিন্তু কে আসিফের সিনেমা পরিচালনা ছিলো এক প্রকার নেশা। কাহিনী,সংলাপ,সঙ্গীত, লোকেশন প্রভৃতি নির্বাচনে তিনি ছিলেন, সুনিপূণ কারিগর। মোঘলে এ আযম সিনেমা করতে গিয়ে তিনি যেমন, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোড়া সৈন্য বন্দুক হাতি কামান নিয়েছেন। আবার, সুটিংএ প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গ্রামের বিজলীর খুটি তুলে ফেলেছেন স্থানীয় জনগন ও সরকারী কর্মকর্তাদের সহযোগীতা নিয়ে। সে হিসেবেও এই সিনেমার গল্পের পেছনে আরো সত্য নতুন গল্প পাওয়া যায়।

বিশটির মত গানের রেকর্ড করা হয়েছিলো। কিন্তু অর্ধেকেরও কম গান সংযুক্ত করা হয়েছে। সিনেমা দীর্ঘ হয়ে যায় বলে। “পেয়ার কিয়া তো ডর না কেয়া “গানের শুটিং করতে যে, শীষ মহলটি বানাতে হয়েচিলো তা গড়তে দুবছর লেগেছিলো। প্রথমে ভারতীয় কাঁচ দিয়ে বানালেও পরে বেলজিয়াম থেকে কাঁচ আনা হয়। কিন্তু প্রথমে বেশ ঝামেলা হয় শুটিংয়ের সময়। কেন না, ক্যামেরার মানুষজন সহজেই স্যুট করতে পারছিলেন না। শীষ মহলের কাঁচের রশ্নীর করানে৷ একটি গানের শুরুতে মেঝেতে যে মুক্তা ঢালা হয় তা আসল মুক্তাই ছিলো।

মোঘল এ আজম, সিনেমাটির আগে একই কাহিনী আনারকলি নামে একটি মুভি মুক্তি পায় এবং তা হিটও হয়। অনেকেই কে আসিফকে প্রায় একই কাহিনী নিয়ে সিনামা না করার পরামর্শ দেয়। যাতে তিনি লোকসানে না পরেন। কিন্তু তার দাবি ছিলো, মৌলিক কাহিনী এক হলেও তার ছবি হবে ঐতিহাসিক। হয়েছেও তাইই। সর্ব কালের সেরা হিন্দি সিনেমার মূকুট মোঘল এ আযমের দখলে। অথচ এই সিনেমার পরিচালক, কে আসিফ শুরুতে একজন দর্জি ছিলেন। তার চাচা অভিনয় জগতে থাকলেও চাচার হাত ধরেও অভিনয়ে আসার কোন আকাংখাই তার ছিলো না। ইতিহাসের পথ সরল রেখায় চলে না, কে আসিফের বেলায়ও চললো না। সেই অভিনয়ে না আসতে চাওয়া মানুষটিই সেরা পরিচালক হয়ে গেলেন। তার সিনেমা হয়ে গেলো ইতিহাসের অংশ!

১৯৪৪ সালে প্রথমে যখন ছবি শুরু হয়, তাতে কাস্টিং করা হয়েছিলো, চন্দ্র মোহন, সাপ্রু ও নার্গীসকে। কিন্তু প্রযোজক পাকিস্তানে চলে যায় দেশ ভাগের সময়। চন্দ্র মোহন ও অকালে মৃত্যু বরননকরে। যার জন্য ছবি ও শুটিং স্থগিত হশে যায়। কিন্তু কে আসিফ হাল ছাড়েন নি। ১৯৪৪ থেকে শুরু করে প্রযোজক ও নাশক নায়িকা পরিবর্তন করে বহু চড়াই উৎরাই অতিরম করে ১৯৬০ সালের আগষ্ট মাসে মোঘল এ আযম মুক্তি পায়। এবং দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দর্শক টিকিক কেটে তিনদিন আগে থেকে লাইনে দাড়িয়ে সেখানেই খাওয়া ঘুম!

তারপরও তারা সিনেমা দেখেছে। আর “শত্রু রাষ্ট্র ” পাকিস্তানের মানুষ পাসপোর্ট ভিসা হাতে চলে আসতো ভারতে মোঘল এ আজম দেখার জন্য! (ক্রমশঃ)

 

আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন…..


Spread the love
Tags :

Grid News

Latest Post

Find Us on Youtube